বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সবারই কম বেশি ক্ষোভ আছে। এমন বাংলাদেশি হয়ত পাওয়াই দুষ্কর যে কিনা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক খুশি (না আছে মনে হয়, তা না হলে এটা চেঞ্জ কেন হয় না !)
যাই হোক আমি কোন শিক্ষাবিদও না আর এ নিয়ে আমার জ্ঞান খুবই কম, বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তারপরও নিজের মনের কথা বলতে তো আর মানা নেই। তাই সবাইকে বলব যারা লেখাটা পড়বেন সবাই কষ্ট করে হলেও ভালো হোক মন্দ হোক কিছু একটা সাজেশন দিয়ে যাবেন। কে জানে হয়ত আপনার সাজেশনের বদৌলতে আমরা ভালো একটা কিছু পেলেও পেতে পারি।
যাই হোক আমি কোন শিক্ষাবিদও না আর এ নিয়ে আমার জ্ঞান খুবই কম, বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তারপরও নিজের মনের কথা বলতে তো আর মানা নেই। তাই সবাইকে বলব যারা লেখাটা পড়বেন সবাই কষ্ট করে হলেও ভালো হোক মন্দ হোক কিছু একটা সাজেশন দিয়ে যাবেন। কে জানে হয়ত আপনার সাজেশনের বদৌলতে আমরা ভালো একটা কিছু পেলেও পেতে পারি।
“প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আপনি যত বড় “গরু” আপনি তত শিক্ষিত।” কথাটা কি বেশি আক্রমণাত্নক হয়ে গেল ? চিন্তার বিষয় ! তাহলে আমিও ওই গরুদের কাতারেই পড়ি কারণ আমার নামের পেছনেও বেশ কয়েকটি সার্টিফিকেট জমা হয়ে আছে। কিন্তু “গরু” বলার পেছনে কারণ আছে। আমাদের ব্যবস্থাই আমাদের গরু হতে বলে। বলে যে যা তোমার ভালো লাগবে না, যা তোমার প্রয়োজন নাই, সেটাও বসে বসে জাবর কাট। আমাদের দেশে ছাত্রত্ব বিচার করা হয় তার প্রাপ্ত মার্কস দেখে আর আমরাও চোখ বন্ধ করে ঝাপ দেই ঐ মার্কস নামক বস্তুর পেছনে। এর জন্য যদি জীবনের সব আশা-আকাঙ্খা বিসর্জন দিতে হয়, বিসর্জন দিতে হয় নিজের স্বকীয়তাকে তাও আমাদের কোন আফসোস নাই। কারণ? ঐ যে, মার্কস গুলো পেলেই তো আমি শিক্ষিত সাথে সার্টিফিকেট, সমাজে নাম বিরাট উঁচু। আরও বড় কথা হচ্ছে এই সার্টিফিকেটই আমাকে আরও বড় কোম্পানীর “চাকর” ঈ করতে সাহায্য করবে।
আমি কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিঃ
১) আমরা সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার বা আইনজীবীই কেন হতে চাই ? তার মানে কি বলতে হবে সব মানুষের ভাবনা চিন্তা এক ? সবাই একই রকম হতে চায় ? এমনটা কি হওয়ার কথা ? বা আমরা সবাই কি শুধু মাত্র এই ক্ষেত্রগুলোতে পারদর্শী , নাকি নিজেদের জানি না তাই বুঝিও না আমরা কি ভালো জানি ?
২) আমরা কেন বাইরের বড় বড় কোম্পানী গুলোর *চাকর* হতে চাই? এই মনোভাবটা কেন আমাদের? ভালো একটা চাকুরী মানেই ভালো একটা ডিসেন্ট জীবন এই জন্যই কি এই চাকুরীর সন্ধানে জীবন দান ?
(১) এর জন্য বলব সামাজিক ট্রেডিশন ! তুমি ভালো ছাত্র মানেই তোমাকে ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার, বড়জোর ব্যাংকার বা আইনজীবী হতেই হবে! তা না হলে “গোল্লায় যাবা।”
(২) এর উত্তরে আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা প্রথমত গরিব দেশ তার উপর ব্রিটিশরা আমাদের মনের ভেতর এমন ভাবে দাসত্ব ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে যে এখনও আমাদের মনে হয় যেন চাকুরীই আমাদের জীবনের নিয়তি। আমরা পড়াশোনা করি ভালো চাকুরী লাভের জন্য। কিন্তু এটা কি আসলে ঠিক ? পড়াশোনা তো চাকুরী বা অন্য কোন কাজের জন্য করা না। এটা হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের দিক, আমার জানার ইচ্ছা। মানুষ জন্ম থেকেই জানতে চায় আর এইটা স্বতঃস্ফূর্ত একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন এটা জোর করে আপনার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে বা আপনি জানার জন্য না শুধু বাঁচার জন্য পড়াশোনা করবেন তখন তা তো নিজ মূল্য হারাবেই!
এখন এর দায় কার ? ছাত্রের ? শিক্ষকের ? নাকি সিস্টেমের?
এখন এর দায় কার ? ছাত্রের ? শিক্ষকের ? নাকি সিস্টেমের?
আমার কাছে মনে হয় এটা সিস্টেমের সমস্যা। সবাই বলে যে ছেলে-মেয়েরা বই পড়তে চায় না কিন্তু কথাটা আসলে হবে “পাঠ্য বই” এর কারণও একটাই আমাদের কাছে পাঠ্য বই বিশাল কোন জিনিস যেটা না পড়লে আমাদের কপালে(!!) দুঃখিত মার্কস সীটের খাতায় বড় করে গোল্লা দিয়ে শিক্ষক মহাশয় বুঝিয়ে দেবেন যে আমি একটা আস্ত গাধা আর আমি কিছুই পারি না। তখন সমাজও ভাববে আমি একটা গাধা। আমার বাবার সাধের নাকটা গেল কাটা ! হায় ! এ কি আমি হতে দিতে পারি ? তো কি করতে হবে ? পাঠ্য বইটা গিলতে হবে। তবে গেলা আর সত্যিকার অর্থে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যে এককথা না এইটা আমরা সবাই জানি। আর সব ছেলে মেয়ের রুচি কি একই রকম ? যে সবার জন্য একই পাঠ্য বই! একেক জন একেক ধরনের কিছু হতে চাইবে, কেউ উপন্যাস পড়বে তো কেউ বিজ্ঞানের বই, কেউ ফ্যাশনের কেউ রহস্যের। এটাইতো মানুষের ভিন্নতা তাই না? আমার মতে পড়াশোনাকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার এখনই সময়, যার যেটা পড়তে ভালো লাগবে সে সেটাই পড়বে , স্কুলের কাজ হবে সেই বিষয়ের বই গুলো তার কাছে পৌছে দেওয়া, শিক্ষকদের কাজ হবে সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। আমরা তখন সত্যিকার অর্থে ভালো চাকুরীজীবী হয়ত পাব না, হয়ত জাবর কাটা গরুর সংখ্যা কমে যাবে, কেউ আর অযথাই অপরের আশায় বসে থাকবে না যে সে এটা গুলে দিবে আর আমি ক্যোঁৎ করে গিলে ফেলব। তখন হয়ত যার ম্যাথ ভালো লাগে সে ম্যাথ নিয়ে পড়বে, পড়তে থাকবে। সব বিষয়ে ডিগ্রী থাকবে না কিন্তু তার মত ম্যাথম্যটিশিয়ান দ্বিতীয়জন হবে না। যার আইন নিয়ে পড়তে ভালো লাগবে সে আইন নিয়ে এতই গবেষণা করবে যে আমাদের দেশের আইনের মত সুন্দর আইন আর কোথাও থাকবে না।
একটু সুন্দর করুন না এই শিক্ষা ব্যবস্থাটা! কেন এই নাম্বারের চোখ রাঙ্গানীর জন্য একজন আকাশ “আকাশ” হতে পারবে না, একজন অক্ষর “অক্ষর” হতে পারবে না, একজন আপনি আপনি হতে পারবেন না? আচ্ছা আপনার কি এখন কোন আক্ষেপ হয় না যে আপনার এটা হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু আপনি পারেন নি শুধু আমাদের এই সিস্টেমের ভেতরে পড়ে থাকার কারণে? যদি হয়ই তাহলে আপনার ছেলে-মেয়ের জন্য কি একটু ভালো কিছু রেখে যাওয়া দরকার না? প্রশ্ন রইল
আমাদের ফেসবুক পেইজঃhttp://www.facebook.com/bd.education.bd
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন